যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। আলোচনায় বেশিরভাগ বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) এক ফেসবুক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানান, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। কাল, পরশুও আলোচনা চলবে। যুক্তি-তর্কে অধিকাংশ বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছে। তবে এখনই শুল্ক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আলোচনায় দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় আবার আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ওয়াশিংটনে পৌঁছেই আলোচনায় সরাসরি অংশ নেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইট সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় একটি সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করাও আলোচনার উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।
এই চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক অব্যাহতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলোচনার আগে ওয়াশিংটন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া এক বার্তায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন জানান, শুধু শুল্ক নয়, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সামগ্রিক দিক নিয়েও আলোচনা চলছে। দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই প্রতিটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়ার আগে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি চিঠি ও প্রস্তাবিত চুক্তির ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এতে সামরিক সরঞ্জাম, এলএনজি, গম, তুলা, উড়োজাহাজসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির প্রস্তাব রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে নমনীয়। একইসঙ্গে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এলএনজি, গম ও তুলা আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এদিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামের ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের ওপরও প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্কহার বাংলাদেশের তুলনায় কম।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম